বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


‘শিগগির নতুন ঘোষণা আসছে খালেদার’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব কেন্দ্রীয় যুবদলের সদ্যসাবেক সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল একজন ত্যাগী, নির্ভীক দক্ষ রাজনীতিক ইদানিং তার বিভিন্ন বক্তব্য-বিবৃতি টকশোতে বিশ্লেষণী ক্ষমতা তরুণ প্রজন্মকে নতুন করে দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে তিনি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার একজন অন্যতম আস্থাভাজন ব্যক্তি সম্প্রতি তার  সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিশেষ প্রতিনিধি জাকির মাহদিন

alal2

আওয়ার ইসলাম : কখন কীভাবে কী উদ্দেশ্যে রাজনীতিতে জড়ালেন?

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল : আমার রাজনীতিতে জড়ানোর পেছনে কোনো ভবিষ্যত লক্ষ অর্থাৎ মন্ত্রী-এমপি হওয়ার সামান্যতম শখ ছিল না। ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত যতটুকু পড়েছি জেনেছি ও চোখের সামনে দেখেছি, তাতে মনের মধ্যে চরম একটা বিদ্রোহী ভাব কাজ করেছে যে এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা যে দলের নেতৃত্বে হল, তারা এভাবে নিজেদের মধ্যে রক্তারক্তি খুরোখুনিতে মেতে উঠবে, তাদের কর্মীদের দুর্নীতি, লুটপাট, রক্ষী বাহিনী গঠন, দল ভেঙ্গে জাসদের সৃষ্টি, মোটকথা স্বাধীন দেশের যে প্রত্যাশা সেটাই নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে ছিল। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। মনটা খুবই বিদ্রোহী হয়েছিল। এরপর যখন ক্ষমতার পটপরিবর্তন হল, জিয়াউর রহমান দৃশ্যপটে এলেন তখন মনে পড়ল এর কণ্ঠেই তো স্বাধীনতার ঘোষণা শুনেছিলাম। এরপর তার ইতিবাচক আচার-আচরণ, কথাবার্তা, জীবনাচার খুব কাছ থেকে দেখেছি ঢাকা ও বরিশালে। দেখে মনে হল তার মধ্যে দলমতের ঊর্ধ্বে চিন্তা, রাষ্ট্রনায়কোচিত বৈশিষ্ট, সত্যিকার দেশপ্রেম, নির্লোভ-নিরহংকার একটি সত্তা আছে। তিনি খালকাটাসহ দেশব্যাপী যে ঊনিশ দফা কর্মসূচি দিলেন, বিদেশে চাল ও শ্রমশক্তি রপ্তানি করলেন, কলকারখানায় পুরোদমে কাজ শুরু হল, এসব দেখে উৎসাহিত হলাম। দেশটা যে চেতনা নিয়ে স্বাধীন হয়েছিল সে চেতনার ভিত্তিতে অন্তত একজন ভদ্রলোক কাজ শুরু করেছেন। এসব থেকে মনে হল তার সঙ্গেই থাকি। মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অন্তরে ধারণ করে জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই আমার রাজনীতিতে আসা। অন্যকোনো উদ্দেশ্য নেই।

আওয়ার ইসলাম : তখন আপনার বয়স কত ছিল এবং কোথায় ছিলেন?

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল : ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছিল, আমি একবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সে পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়। এরপর আবার ৭২ সালে পরীক্ষা দিয়েছি। তখন বরিশালে ছিলাম। বয়স ১৮/২০ বৎসর হতে পারে।

আওয়ার ইসলাম : এ পথে আপনার গুরু বা অগ্রগামী ব্যক্তি কে?

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল : গুরু সরাসরি জিয়াউর রহমান। তবে মাঝখানে সেতুবন্ধনের কাজটি করেছেন বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথমেই যে একটি অলিখিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছিলেন অর্থাৎ সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেশা, তথন বরিশালে আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে তিনি বলেছিলেন কিছু ভাল ও মেধাবী যুবক তরুণকে সংগঠিত করতে। সেই সূত্রেই জিয়াউর রহমানে সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটে।

আওয়ার ইসলাম : শুরুতে একটি রাজনৈতিক দলের ত্যাগ, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। এর প্রতিষ্ঠাতা বা প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের গুণ-বৈশিষ্ট্যও সমাজকে আকৃষ্ট করে। কিন্তু যখন তারা নিজেরা আত্মসমালোচনার পরিবর্তে ভেতরে বাইরে বরং নিজেদের এসব গুণগাণ গাওয়া আর চামচামি করাই একমাত্র কাজ মনে করে, তখন কি দল এবং নেতাকর্মীরা ভ্রান্ত আত্মবিশ্বাসে ভর করে লাইনচ্যুত হয় না? যেমন আজ বড় দুই দলই দুই ব্যক্তির চেতনা নিয়ে যা করছেন ও বলছেন?

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল : না, আপনার এ কথার সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করি। পরিস্থিতির ভিন্নতা আছে। জিয়াউর রহমানের জীবিতকালে কেউ তার গুণকীর্তন করতে পারেনি। আমি নিজে এমন অনেক ঘটনার সাক্ষী। একবার বরিশালে সাধারণ ও পেশাজীবী মানুষদের নিয়ে একটি সমন্বয় সভা করছিলেন, বরিশাল জেলা স্কুলের অডিটরিয়ামে। সেখানে মুসলিম লীগের একজন নেতা যিনি পাকিস্তান আমলে এমপিএ ছিলেন, তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে জিয়াউর রহমানকে জাতির আলোকবর্তিকা, জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি বিশেষণ দিয়ে বক্তব্য শুরু করেছিলেন। জিয়াউর রহমান এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধমক দিয়ে বসিয়ে দিয়েছেন। বললেন, বন্ধ করুন এসব। এগুলো করেই আপনারা আগের যারা ছিল তাদের ক্ষতি করেছেন, দেশের ক্ষতি করেছেন। কাজের কথায় আসেন। বলেন বরিশালে কি সমস্যা। পুরনো জেলা এটা, ব্রিটিশ আমলের জেলা। এখানে এত সমস্যা কেন?

বিদ্যুতের ব্যাপারে একজন গ্রাহক অভিযোগ করলে তিনি পিডিবির সুপারেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ারকে দাঁড় করিয়ে জানতে চাইলেন এর সমাধান কী? মাইক চলে গেল তার কাছে। মোটকথা জিয়াউর রহমান তোষামোদি একেবারেই পছন্দ করতেন না। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি সুবিধাবাদিতা, দুর্নীতি পরিহার করেছেন, এমনকি আত্মীয়-স্বজনদেরও এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্রয় দেননি। তার একজন আত্মীয় সরকারি কর্মকর্তা একটা গাড়ি চালাচ্ছিলেন যার তিনি প্রাপ্য না, খবর পেয়ে সাথে সাথে গাড়ি প্রত্যাহার করে তাকে ঢাকা থেকে বদলি করে দিয়েছেন। জিয়াউর রহমানের এসব ঘটনা ব্যাপকভাবে জনগণ জানতে পেরেছে তার নিহত হবার পরে। এর আগে এত বই-পুস্তকও প্রকাশিত হয়নি, আর তিনি নিজের প্রশংসা কখনোই পছন্দ করতেন না। তোষামোদির প্রতিক্রিয়া ও পরিণতি এর আগের রাজনৈতিক দলগুলোতে দেখে শিক্ষা গ্রহণ করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি একটি নতুন পথ রচনা করেছিলেন। সুতরাং এক্ষেত্রে দুটি দলকে একই মাপকাঠিতে বিচার করলে হবে না। তিনি কোনো আত্মীয়-স্বজনকে কাছে ঘেষতে দিতেন না।

[caption id="attachment_3364" align="alignleft" width="400"]alal3 জিয়াউর রহমানের জীবিতকালে কেউ তার গুণকীর্তন করতে পারেনি। আমি নিজে এমন অনেক ঘটনার সাক্ষী। একবার বরিশালে সাধারণ ও পেশাজীবী মানুষদের নিয়ে একটি সমন্বয় সভা করছিলেন, বরিশাল জেলা স্কুলের অডিটরিয়ামে। সেখানে মুসলিম লীগের একজন নেতা যিনি পাকিস্তান আমলে এমপিএ ছিলেন, তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে জিয়াউর রহমানকে জাতির আলোকবর্তিকা, জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি বিশেষণ দিয়ে বক্তব্য শুরু করেছিলেন। জিয়াউর রহমান এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধমক দিয়ে বসিয়ে দিয়েছেন।[/caption]

আমরা দেখেছি, জিয়াউর রহমানের নিজের পোশাক কাটছাট করে ছোট করে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানকে পরাতেন। আমরা দেখেছি, এত বিশাল এই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে কোথাও তার নামে পাঁচকাঠা জমি নেই, ব্যাংকেও কোনো টাকা ছিল না একজন রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্ত্বেও।

আওয়ার ইসলাম : তরুণ বয়সে রাজনীতিতে জড়ানোর পেছনে আপনার যে সৎ ইচ্ছা অনুভূতি কাজ করেছে, এরপর যখন আজ এ পর্যায়ে এসে আপনি গতানুগতিক অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতোই প্রতিষ্ঠাতার গুণগান গেয়েই সময় পার করছেন, তো আপনাদের এইসব গুণগান কি জাতির বর্তমান সংকট উত্তরণে কোনো ভূমিকা রাখে? এতে মূলত সংকট কমে, না আরও ঘনীভূত হয়?

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল : না, এতে করে সংকট বাড়ছে। সমস্যা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। নেতৃত্বের পূজা করাটা অবশ্যই বাড়াবাড়ি। বরং সঠিক নেতৃত্বের অনুসরণ করা উচিত। জিয়াউর রহমানের বিষয়টা হচ্ছে, তার প্রশংসা খুব বেশি না করে বরং তার ব্যক্তিগত জীবনাচার, রাষ্ট্রের কল্যাণে তার চিন্তাভাবনা, এসব যদি অনুসরণ করা হয় নীরবে, কাজের মাধ্যমে, তাহলেই আমরা মনে করি তাকে যথার্থ সম্মান করা হবে। বাড়াবাড়ি যেন না হয় সেটা লক্ষ রাখতে হবে।

আওয়ার ইসলাম : বাড়াবাড়ি না করে বরং যতটুকু দরকার ততটুকু বলে বিশ্লেষণ করা এবং সমস্যার গভীরে যাওয়া উচিত। তো আপনাদের বক্তব্য-বিবৃতিগুলোতে কি সমস্যার বিশ্লেষণ প্রাধান্য পায়? না অন্য দলের সমালোচনা প্রাধান্য পায়?

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল : সমস্যার বিশ্লেষণই প্রাধান্য পায় এবং সেটাই পাওয়া উচিত। মাত্র সাড়ে তিন বছরের একটি দল রেখে গিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। সেই সাড়ে তিন বছরের দলটি তেষট্টি বছরের পুরনো একটি দলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমান তালে এগোচ্ছে। জনপ্রিয়তায় দুটি দল কাছাকাছি। তবে গত কয়েক বছরে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় ধ্বস নেমেছে এসব বাড়াবাড়ির কারণে। তাই বিএনপির উচিত এ জাতীয় বাড়াবাড়ি না করে বরং জাতীয় সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দেয়া। জাতীয় সমস্যাগুলোর সমাধান হলেই জাতি বুঝবে শহীদ জিয়ার দল সঠিক আদর্শেই পথ চলছে। এক্ষেত্রে তোষামোদি ও দোষারোপের কুসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সমস্যার গভীরে ঢুকে বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য অনেকগুলো কাজ আমরা করেছি। যেমন বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর বেগম খালেদা জিয়া সরকারকে সবরকম সহযোগিতার কথা বলেছিলেন এবং গত সরকারের আমলে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়েও বলেছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কমিটমেন্ট বাস্তবায়নেও আমরা সহযোগিতা করব। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জনগণের আটশ কোটি টাকা চুরির বিষয়েও আমাদের একই মনোভাব। নেত্রীর নির্দেশে সারাবিশ্বে যোগাযোগ করে আমরা একটা বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্ট তৈরি করে পরবর্তী সহযোগিতার আশ্বাসসহ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থমন্ত্রণালয়ের সচিব ও অর্থমন্ত্রীকে দিয়েছি। আমরা প্রকৃতপক্ষইে জাতীয় সমস্যাসমূহরে সমাধান চাই, দলাদলি কিংবা রেষারেষি করে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে দোষ চাপানো নয়।  কিন্তু সরকার আমাদের প্রস্তাবকে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফলে জাতির সমূহ ক্ষতি হচ্ছে।

আওয়ার ইসলাম : সরকার তো নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বিরোধী দলগুলোর সহযোগিতার প্রস্তাব অগ্রাহ্য করবেই। সেক্ষেত্রে জাতির চূড়ান্ত ক্ষতি এড়াতে বিকল্প পথ হিসেবে সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরের চিন্তাশীল, কল্যাণকামী, বুদ্ধিজীবী এবং খ্যাত-অখ্যাত বিভিন্ন যোগ্যদের ঐক্য ও সমন্বয়রে একটি শক্তিশালী প্লাটফরম গড়তে আপনাদের ভূমিকা কী? যদি আসলেই আপনারা জাতীয় সমস্যার সমাধান চান।

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল : জাতীয় সমস্যার সমাধান যে আমরা চাই তার দুটি নগদ উদাহরণ তো আপনাকে দিলাম। তাছাড়া কিছুদিন আগে যে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল হল সখোনে নেত্রী একটি নতুন ভিশন দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, প্রতিহিংসা, রেষারেষি, বিদ্বেষ পরিহার করে জাতীয় পর্যায়ের সমস্ত পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের মেধাসম্পন্ন লোক এবং আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে আমরা এ জাতিকে একটি রেঙ্গুনেশনে পরিণত করতে চাই। যেখানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী থাকবে, সকল ধর্মের মানুষরা থাকবে, আন্তধর্মীয় সংলাপ হবে, পুরোহিত, ইমাম, পাদ্রী, যাজক, ভিক্ষুসহ সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব ও আন্তসংলাপ নিশ্চিত করা হবে। বিএনপির এসব মৌলিক চিন্তাধারা ও কর্মকাণ্ড অতিশীঘ্রই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নেত্রী নিজে জাতির সামনে উপস্থাপন করবেন।

আওয়ার ইসলাম : তো নেত্রীর এই বিশাল কর্মযজ্ঞের আগে আপনাদের মতো নেতাদের পক্ষ থেকে কোনো পূর্বপ্রস্তুতিমূলক কর্মসূচি, রিহার্সেল বা এ জাতীয় কিছু কি ছিল, বিশেষত মানবিক ঐক্য ও সমন্বয়ের সূত্রে?

[caption id="attachment_3365" align="alignright" width="480"]alal4 আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে আমরা এ জাতিকে একটি রেঙ্গুনেশনে পরিণত করতে চাই। যেখানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী থাকবে, সকল ধর্মের মানুষরা থাকবে, আন্তধর্মীয় সংলাপ হবে, পুরোহিত, ইমাম, পাদ্রী, যাজক, ভিক্ষুসহ সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব ও আন্তসংলাপ নিশ্চিত করা হবে। বিএনপির এসব মৌলিক চিন্তাধারা ও কর্মকাণ্ড অতিশীঘ্রই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নেত্রী নিজে জাতির সামনে উপস্থাপন করবেন।[/caption]

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল : বর্তমান সরকারের সীমাহীন অযোগ্যতার কারণে সরকার সমর্থক অনেকেই এ মুহূর্তে সরকারের তীব্র সমালোচনা করছে। সুলতানা কামাল, ড. কামাল হোসেন, নুরুল কবির, আসিফ নজরুল, আফসান রহমান প্রমুখ। যদি সরকার আমাদের সহযোগিতার আহ্বানে সাড়া না দেয় তাহলে আমরা সরকার ও রাজনীতির বাইরের যোগ্যদের নিয়ে একটি বৃহৎ জাতীয় ঐক্য ও বিকল্প প্লাটফরম অবশ্যই গড়ে তুলব। এ লক্ষে সবার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। তবে সরকার যেভাবে হামলা-মামলা করে আমাদের ব্যস্ত রাখছে ও অহেতুক হয়রানী করছে, নেত্রীকে প্রতি সপ্তাহে হাজিরা দিতে বাধ্য করছে, তাতে আমরা জনগণের সার্বিক মুক্তির লক্ষে কোনোই পদক্ষেপ নিতে পারছি না।

আওয়ার ইসলাম : যাদের নাম বললেন এদের অনেকেই বিএনপি-জামাত ঘেষা বুদ্ধিজীবী। যেমন আসিফ নজরুল। আর আপনারা যারা হামলা-মামলার শিকার, এই দুঃসময়ে দলের বিকল্প নেতৃত্ব কোথায়, যারা দল-মত নির্বিশেষ একটি জাতীয় বৃহৎ ঐক্য গড়ে তুলবে?

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল : না, সুলতানা কামাল, ড. কামাল হোসেন, নুরুল কবিররা প্রচণ্ড রকমের আওয়ামী বা বামপন্থি বুদ্ধিজীবী। আর আসিফ নজরুল বিএনপিঘেষা হতে পারে তবে জামাতঘেষা নয়। যাহোক, বৃহৎ ঐক্যের বিষয়ে আপনার সঙ্গে আমি একমত। এ নিয়ে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

আওয়ার ইসলাম : এই সময়ের রাজনৈতিক যে সংস্কৃতি, গতানুগতিক আন্দোলন সংগ্রাম, বক্তব্য-বিবৃতি যেগুলোতে কোনো তত্ত্ব নেই, বিশ্লেষণ নেই, কোনো গভীর দর্শন নেই, বিশাল বিশাল সমাবেশে কেবল ভাসা ভাসা শব্দের ফুলঝুরি আর অন্যের সমালোচনা, এর দ্বারা কি তরুণ প্রজন্মের সঠিক চেতনার বিকাশ ঘটবে কিংবা অন্ততপক্ষে অশুভ মানসিকতা পরিবর্তিত হবে?

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল : না, সক্ষম না নতুন প্রজন্ম কোনো পুরনো ইতিহাস ঘাটাঘাটি একেবারেই পছন্দ করে না একই সঙ্গে একের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানো, মূল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে কেবল সরকারের সমালোচনা কিংবা সরকারকর্তৃক বিরোধী দলকে সমালোচনা তরুণ প্রজন্ম আদৌ পছন্দ করে না তারা কাজ দেখতে চায়, কাজে বিশ্বাসী এবং কাজ শুরু করতে যা দরকার তাই শুনতে চায় সুতরাং নতুন প্রজন্মের ভোটারদের সমর্থন সহযোগিতা পেতে আমাদের ভালো কাজের উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে গতানুগতিক ওসব বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে নয়

আওয়ার ইসলাম : ‘বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে নয়, ভালো কাজের মাধ্যমে’ কথাটা ঠিক আছে। কিন্তু এই ‘ভালো কাজের’ ইচ্ছেটা তরুণ প্রজন্মের অন্তরে কীভাবে তৈরি হবে? সেখানে কি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ও যৌক্তিক সমাধানধর্মী বক্তৃতা বিবৃতির প্রয়োজন নেই?

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল : আসলে জনসভাগুলোতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও মন-মানসিকতার লোক থাকায় মূল নেতা বা নেত্রী ছাড়া অন্যদের বিশ্লেষণমূলক আলোচনা শোনার ইচ্ছে বা করার পরিবেশ থাকে না। এটা একটা কঠিন বাস্তবতা। সেক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন সেমিনার ইনার হাউজ, প্রেসক্লাব বা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে করে থাকি। সেটা দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে না, বরং জাতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যে সমস্যা সমাধানের ভবিষ্যৎ রূপরেখা কী হতে পারে। প্রস্তাব আকারে আমাদের চিন্তাভাবনা পেশ করছি এবং অন্যদের চিন্তাভাবনা, প্রস্তাব ও পরামর্শ নিচ্ছি। এবং এটাই হচ্ছে যুগোপযোগী পদক্ষেপ।

আওয়ার ইসলাম : প্রেসক্লাব-রিপোর্টার্স ইউনিটির সভা-সেমিনারগুলোতে বিশ্লেষণমূলক ও সমাধানধর্মী আলোচনার যে পূর্বশর্ত- ব্যাপক পড়াশুনা, জ্ঞান-গবেষণা, দলীয়গণ্ডির বাইরে চিন্তাভাবনা, অনুসন্ধান ও সময়- এসব কি এখনকার রাজনৈতিক লিডারদের আছে?

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল : এটা আসলে মন-মানসিকতার ব্যাপার। পর্যাপ্ত সময় সুযোগ কারো জীবনেই থাকে না, তা বের করে নিতে হয়। ইচ্ছে থাকলে জেলখানায় বসেও জ্ঞান আহরণ করা যায়। তবে দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক লিডারদের সে ইচ্ছে একেবারেই নেই। এক্ষেত্রে আমাদের বিশেষ মনোযোগী হওয়া দরকার এবং আমি মনে করি এই ইচ্ছে ও সময়-সুযোগ যাদের আছে তাদের বড় বড় দলে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। শুধুমাত্র দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা দিয়েই যেন গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো পূর্ণ করা না হয়। বিশ্ব এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিবর্তিত। জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে সেই পরিবর্তনের সঠিক জায়গাগুলোতে পৌঁছাবার জন্য বয়স্কদের চেয়ে তরুণ এবং যুবনেতৃত্বের আগ্রহ অনেক বেশি। তাই এদের সুযোগ দিলে কাজ অনেক এগিয়ে যায়।

আওয়ার ইসলাম : আপনি কি যথেষ্ট পড়াশুনা ও দলীয়গণ্ডির বাইরে চিন্তাভাবনা করেন?

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল : জি, আমি চেষ্টা করছি এবং মহান আল্লাহর মেহেরবানীতে অল্প পড়লেই দীর্ঘদিন মনে থাকে।

আওয়ার ইসলাম : দলে আপনার যতটুকু মূল্যায়ন ও পদাধিকার আছে, এর ভিত্তিতে জাতি আপনার কাছ থেকে কী আশা করতে পারে?

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল : আমি আপনাকে মোটাদাগে এ প্রসঙ্গে বলি, যদি ভবিষ্যতে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব আমাদের হাতে আসে এবং আমি দায়িত্বশীল পদে থাকি (মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের পর), ১. পরিবেশ দূষণ ও গাড়ির হাইড্রোলিক হরণ বন্ধের ব্যবস্থা করব, ২. খাদ্যে ভেজাল রোধে প্রয়োজনে ফাঁসির বিধান রাখা হবে, ৩. বাংলাদেশের বিশাল অনাবাদী ও নতুন ভূখণ্ডগুলোর পরিকল্পিত ব্যবহার- শিল্প-কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাস, আইটি পার্ক ইত্যাদি আলাদা আলাদা জায়গায় করা। এ জন্য সমস্ত চিন্তাবিদ ও সমাজতত্ত্ববিদদের একত্রিত করে পরামর্শ গ্রহণ এবং তাদের একটা স্পেশাল টিম গড়ে তুলব।

আওয়ার ইসলাম : ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় যাক বা না যাক, এখন আপনি যে অবস্থানে আছেন তা দিয়ে জাতির জন্য আপনি কতটুকু কী করতে পারেন?

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল : আসলে এই অবস্থায় খুব বেশি কিছু করার সুযোগ নেই। তাছাড়া দলীয় প্রধানের পরামর্শের বাইরে একজন রাজনীতিকের যাওয়ার সুযোগ খুব কম থাকে। কিন্তু আমি বিভিন্ন জায়গায় মুক্ত আলোচনা করি, যদিও সেটা দলের বিপক্ষে যায়। আর চেয়ারপার্সন এবং মহাসচিবের সঙ্গে দলীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলোতে নিজেদের ভুলত্রুটিগুলো তুলে ধরি। তারা এসব অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেন। নেত্রীকে এক্ষেত্রে অনেকটাই প্রভাবিত করতে পারি এবং তার একটি ভালো গুণ আছে, ভুল ধরে দিলে তিনি নিজেকে শোধরে নেন। ফোরামের বাইরে একান্তে কথা বলার সময় তিনি অনেক ভুলত্রুটি স্বীকার করেন, আবার আমাদের ভুলগুলোও ধরিয়ে দেন। তার কাছে অবাধে প্রবেশ করার সুযোগটা আমি সহজেই পাই।

আওয়ার ইসলাম : নেত্রীর গত সাত-আট বছরের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর সঙ্গে আপনি কতটুকু একমত? বিশেষ করে শেখ হাসিনার চায়ের আমন্ত্রণে সাড়া না দেয়ার বিষয়টি?

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল : এমন সিদ্ধান্ত তো অনেকগুলো। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে সহযোগিতার প্রস্তাব দেয়া, সর্বশেষ ব্যাংকের চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধারে সরকারকে সহযোগিতা করা ইত্যাদি। এসবে দ্বিমতের কারণ নেই। আর সেই চায়ের আমন্ত্রণে সাড়া না দেয়ার বিষয়েও নেত্রীর সঙ্গে আমি একমত। কেননা সেটি ছিল এমন যে আসো মামা তুমি আর আমি দেশটা ভাগ করে খাই। সেটা ছিল ক্ষমতা ও মন্ত্রিত্বের ভাগাভাগি ও দর কষাকষির একটা প্রস্তাব। সুতরাং ব্যাপক জনগণের কল্যাণ ও অংশগ্রহণ ছাড়া এ ধরনের ভাগাভাগিতে আমরা নেই। যদি এ ধরনের ভাগাভাগির মানসিকতা পরিহার করে রাষ্ট্রের কল্যাণে কোনো প্রস্তাব আমাদের কাছে আসে, তাহলে নেত্রী রাজি না হলেও আমরা জোর করে রাজি করাব ইনশাআল্লাহ।

দলীয় প্রধানের পরামর্শের বাইরে একজন রাজনীতিকের যাওয়ার সুযোগ খুব কম থাকে। কিন্তু আমি বিভিন্ন জায়গায় মুক্ত আলোচনা করি, যদিও সেটা দলের বিপক্ষে যায়। আর চেয়ারপার্সন এবং মহাসচিবের সঙ্গে দলীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলোতে নিজেদের ভুলত্রুটিগুলো তুলে ধরি। তারা এসব অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেন।

আওয়ার ইসলাম : কিন্তু তারপরও সরকারপ্রধানের পক্ষ থেকে টেলিফোনে সরাসরি প্রস্তাব, সেটাকে প্রত্যাখ্যান করা কোনোভাবেই কি উচিত হয়েছে?

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল : হা হয়েছে। কারণ প্রস্তাবটি ক্ষমতা ও মন্ত্রিত্বের ভাগাভাগিতে ব্র্যাকেটবন্দি করে ফেলা হয়েছিল। এটা জাতীয় নীতিমালার ভিত্তিতে করা হয়নি।

আওয়ার ইসলাম : জাতীয় নীতিমালার ভিত্তিতে আপনারা কোনো প্রস্তাব দিচ্ছেন?

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল : আমরা সে সুযোগ পাচ্ছি না। মামলা-হামলা-কারাগারে আমাদের ব্যস্ত রাখা ও হয়রানি করা হচ্ছে। তারপরও আমি একজন মানুষ হিসেবে দলের বাইরে এবং দলীয় চিন্তার উর্ধ্বে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্যাপক জনসমাজের তরুণ, যুবক ও অন্যান্যদের সঙ্গে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি একজন রেগুলার ব্লাড ডোনার। সন্ধানীর কার্ড হোল্ডার। বিগত পঁচিশ বছর ধরে মানবতার স্বার্থে রক্ত দিচ্ছি ব্লাডব্যাংকে। আমার দুই ছেলেও নিয়মিত রক্ত দেয়। আমি এবং আমার স্ত্রী দুজনেই মরণোত্তর চক্ষু দান করেছি স্ট্যাম্পে লিখে দিয়ে। আমি মনে করি এগুলো সমাজের জন্য উপকারী। আমরা শান্তি চাই।

আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ