শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


ডালপট্টিতে ডাল নেই

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

dalআহসান শরিফ, ফিচার এডিটর : সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষ খাবার খায়। মাছ, গোশত, শাক, সবজি এবং ডাল খাবার তালিকায় অন্যতম। বাজার মূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষের নাভিশ্বাস তুলে প্রতিনিয়ত। মাংশ কিনবেন; দাম বেশি। মাছ কিনবেন; দাম বেশি। সবজি কিনবেন; দাম বেশি। উপায় না পেয়ে নিম্ন আয়ের মানুষ দুমুঠো খাবার খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য বেছে নেয় ডাল।

ধনি, গরিব, দেশী, বিদেশী সবার খাবারেই প্রয়োজন ডালের। নাস্তা, ইফতারি কিংবা বিয়ের অনুষ্ঠানে লাগে ডাল, ছোলা এবং ডাবলি। ঢাকার মানুষের সবরকম ডালের সরবরাহ হয় চকবাজার ডালপট্টি থেকে। বড় কাটারা, ডালপট্টি এবং মৌলভি বাজার এলাকা মিলে প্রায় ৬৫ টি ডালের দোকান। মসুরি, খেসারি, মুগ, ছোলা, মটর, কালি মটর, অরহল, মাস কলাইর মতো সবরকমের ডাল সরবরাহ করে এ দোকানগুলো। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নেপাল, তুর্কি-সহ বহু দেশ থেকে আমদানি করা হয় ডাল। সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ডালপট্টিতে এখন আগের মতো ডালের দোকান নেই। নেই ডালের মিল, শ্রমিক কিংবা বহনকারী গরুর গাড়িও। যানজট, পরিকল্পনাহীন রাস্তা, ডাল শুকানোর মাঠ না থাকা এবং যানবাহনের সমস্যাকে বড় করে দেখেন পুরণো ডাল ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে হাজি জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সুবিধা না দিলে এক সময় ব্যবসা বন্ধ হইয়া যাইবো। মানুষের দুর্ভোগ বাড়বো। এ জন্য কেন্দ্রীয় কারাগারকে সরাইয়া নিয়া এ জায়গাকে ব্যবসায়ী মহল্লা বানাইতে পারে সরকার। এতে কইরা ব্যবসায়ীরা উপকৃত হইবো। প্রয়োজনীয় পার্কিং এবং প্রশস্ত জায়গা পাইলে সব কিছুই সহজে হইবো।’

বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি, রহমতগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা, হাজি সফি মাহমুদ। বাপ-দাদার উত্তরাধীকার সূত্রে পাওয়া ডাল ব্যবসায়ী তিনি। ডাল ব্যবসার ভাল-মন্দ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগের মতো ব্যবসা নাই। পুরা এলাকায় ১৮৩ টা দোকান থেইকা আছে ৬৫ টা। ৫৫ টা মিল থেইকা আছে ৬ টা। শ্রমিক কইমা গেছে। কারণ, চাহিদা অনুপাতে ছোলার উৎপাদন কম। ছোলার আবাদ তো দেশে নাই-ই। খেসারির আবাদও কইমা গেছে। গোডাউন ভাড়া বেশি।’ উৎপাদন কমার কারণ জানতে চাইলে সফি মাহমুদ বলেন, ‘আবাদের জমি নাই। আবাসন কোম্পানি প্লট বিক্রি কইরা জমি নষ্ট করতাছে। এ ছাড়া বছরে তিন সৃজন ধান করা গেলেও ডাল করা যায় মাত্র এক সৃজন। শ্রমিকদের পোশায় না। ডালের চাহিদা পুরণ করতে ৮০ পার্সেন্ট ডাল দেশের বাইর থেইকা আনতে হয় আমগো।’

সারা বছর ডালের দাম নাগালের কাছাকাছি থাকলেও রমজানে লাগে আগুন। হুট করে ডালের দাম বেড়ে ক্রয়সীমার বাইরে চলে যায়, এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মিডিয়া বলে আমরা সিন্ডিকেট করি। আসলে বিষয়টা তা নয়। ডালে সিন্ডিকেট করা যায় না। বেশি দিন ধইরা রাখলে পোকায় ডাল নষ্ট কইরা ফালায়। কাস্টম অফিসে টেক্সও দেওয়া লাগে না।’ তা হলে দাম বাড়ে কেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়লে সব কিছুর মতই দাম বাড়ে ডালের। এ ছাড়া দাম বাড়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরাও। ৪২ টাকার ডাল তারা ৫২ টাকা বিক্রি করে। কাষ্টমাররাও কিনে। এ ব্যাপারে গ্রাহকরা সচেতন হলে সহজ। প্রথম রমজানে এক সাথে এক মাসের বাজার না করে সপ্তাহে ৩ দিন বা ৪ দিন বাজার করতে পারেন তারা। এতে এক সঙ্গে খুব বেশি চাপ পড়বে না। চাহিদা বেশি থাকলেই তো দোকানিরা দাম বাড়ায়।’ সরকারের হস্তক্ষেপে দাম স্থিতিশীল রাখা যায় কি না? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, রাখা যাবে, তবে সরকারের যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রমজান এলেই সরকার হুড়োহুড়ি শুরু করেন, এর আগে কোন খবরই রাখেন না। নতুন সৃজনে অর্থাৎ রমজানের ৪ মাস আগে থেকে সরকার স্টক করতে পারে। এতে সরকারের পক্ষে সম্ভব দাম স্থিতিশীল রাখা।’

মাছ, মাংশ কিংবা উন্নত তরকারি কেনার সামর্থ নেই গরিব, অসহায় এবং নিম্ন আয়ের মানুষের। বেঁচে থাকার ইচ্ছে আছে তাদেরও। অন্তত ডাল দিয়ে দুবেলা ভাত খাবে, এ ব্যবস্থাটুকু করার কেউ কি নেই?

/আরআর


সম্পর্কিত খবর