শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


‘ইসলামে গুপ্তহত্যা, গুম, খুন নিষিদ্ধ’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

1461075506স্টাফ রিপোর্টার : ইসলামে গুপ্তহত্যা, অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলা, গুম, খুন, বৃদ্ধ, মহিলা ও শিশুহত্যা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ বলে মন্তব্য করেছে হেফাজতে ইসলাম। কোটি কোটি মানুষকে আতঙ্কের মধ্যে রেখে দেশে কোনো রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা আদৌ সম্ভব নয় বলেও দাবি করে সংগঠনটি ।

শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী ।

সংবাদ সম্মেলনে বাবুনগরী বলেন, একটি সংঘবদ্ধ গুপ্তঘাতকচক্র দেশে সিরিজ টার্গেট কিলিং-এ মেতে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক হত্যাকান্ডের ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডে দেশের সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কয়েকজন লোক যুক্ত হয়েছেন। পাবনার অনুকূল চন্দ্র ঠাকুর সেবাশ্রমে নিত্যরঞ্জন পাণ্ডে নিহত হওয়ার পর ভারতীয় হাইকমিশনের কূটনীতিকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। গত সপ্তাহে চট্টগ্রামের জিইসির মোড়ে পুলিশ কর্মকর্তা এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু প্রকাশ্য দিবালোকে রাজপথে সন্ত্রাসীদের হাতে মর্মান্তিকভাবে নিহত হন। গত কয়েক বছরে দেশে যেসব গুম, খুন, নাশকতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তাতে দেশবাসী শঙ্কিত ও আতঙ্কিত। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার অধীনে একজন মানুষও আঁততায়ী, সন্ত্রাসী বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে বিনা বিচারে নিহত হোক, এটা কোনো বিবেকবান মানুষ কামনা করে না। হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে এসব হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ইসলামের সাথে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলাম সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছে কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি যে, কতিপয় ইসলামবিদ্ধেষী চক্র পরিকল্পিতভাবে ইসলাম ও সন্ত্রাসবাদকে একাকার করে মুসলমানদের কলঙ্কিত করতে চায়।

হেফাজত নেতা বলেন, দেশের কোটি কোটি মানুষকে আতঙ্কে রেখে দেশে কোনো রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা আদৌ সম্ভব নয়। সারাবিশ্বেই সন্ত্রাসবাদ রাষ্ট্রযন্ত্রের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সন্ত্রাস দমনের নামে একসাথে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার ও হয়রানি করার নজির আর কোথাও নেই। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে। প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করুন। সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম বা জাতপাত নেই। ওরা শুধুই অপরাধী। কিন্তু নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে হয়রানি না করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

শিক্ষানীতি নিয়ে হেফাজত নেতৃবৃন্দ বলেন, বিতর্কিত ইসলামবিরোধী শিক্ষানীতি-২০১০ অনুসারে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকগুলোতে ক্রমান্বয়ে ইসলামি ভাবধারার পাঠসমূহ বাদ দিয়ে তদস্থলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদী চিন্তাধারার টেক্স প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। আমরা সেসবের যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ বিগত ১৬ মে স্মারকলিপির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নিকট পেশ করেছি। কিন্তু অত্যন্ত ক্ষোভ ও দুঃখের সাথে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে আপনাদের মাধ্যমে সরকার ও দেশবাসীর নিকট কিছু তথ্য তুলে ধরা জরুরি মনে করছি। কারণ, বিগত ১৩ জুন জমিয়তুল মোদাররেসিনের ইফতার মাহফিলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ “শিক্ষানীতি ধর্মবিরোধী নয়” এরকম অসত্য কথা বলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করেছেন। অথচ শিক্ষানীতি অনুযায়ী প্রণীত প্রায় সকল শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে হিন্দুত্বাবাদ ও নাস্তিক্যবাদ এখন প্রমাণিত সত্য। শিক্ষামন্ত্রী বাম-ঘরানার হওয়ায় তিনি এদেশের মুসলমানদের সেন্টিমেন্ট বুঝতে পারছেন না। পাঠ্যসূচি পরিবর্তনের দাবিতে ইসলামী জনতা রাজপথে নেমেছে। রক্তের বিনিময়ে হলেও তারা এ দাবি আদায় করে ছাড়বে ইনশাআল্লাহ।

এ সময় সংগঠনটির যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী, হেফাজত আমিরের প্রেসসচিব মাওলানা মনির আহমদ, মাওলানা সরোয়ার কামাল আজিজী, মাওলানা হাকীম আবু তাহের আরবী, মওলানা ইউনুস, মাওলানা ইকবাল খলিল, মাওলানা আবু রায়হান, মাওলানা কুতুবুদ্ধিন, মাওলানা ফরিদুল হক, মাওলানা মাহমুদুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ