শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


শবে বরাত : আমলে চাই মধ্যমপন্থা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

hd_beautiful_shab_e_barat_wমহিউদ্দিন ফারুকী : ছহীহ হাদিসের ভাষ্যমতে পুরো শাবান মাসই ফজিলত ও মহাগুরুত্বের দাবি রাখে। রমজানের পুর্ণ ফজিলত প্রাপ্তি ও পুণ্য অর্জনের প্রস্তুতিও এমাসেই নেয়া প্রয়োজন। তাই রাসুল (স.) এমাসে অধিক পরিমানে রোজা রেখে রমজানের প্রস্তুতি শুরু করতেন।

তিনি বলতেন, ‘এটি এমন মাস যা রমজান ও রজবের মাঝামাঝি হওয়ায় মানুষ এক্ষেত্রে অনেক অবহেলা করে। এমাসে আল্লাহ তায়ালার নিকট আমল প্রেরণ করা হয়। আমি চাই যেন রোজা অবস্থায় আমার আমল প্রেরিত হয়।’ তবে শাবানের মধ্য রজনী তথা ১৫ই শাবানের রাতকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে ব্যপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যায়।

একদিকে কিছু মানুষ এ রাতের অনেক ফজিলত বর্ণনা করে বিভিন্নভাবে এবাদতের কথা বলে থাকেন। এক্ষেত্রে শরিয়তে নেই এমন কাজও তাদের অনেকের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। অন্যদিকে বর্তমানে অনেককেই এবিষয়টিকে একেবারে বানোয়াট, বেদাত ও ভিত্তিহীন বলতে দেখা যায়। মূলত প্রান্তিকতা বাদ দিয়ে মধ্যম পন্থা অবলম্বনই ইসলামের শিক্ষা। এক্ষেত্রে আমাদের প্রান্তিকতা মুক্ত হতে হবে। ভারসাম্যতার পরিচয় দিতে হবে। মধ্য শাবানের রজনী বা শবে বরাতের ক্ষেত্রে সঠিক ও প্রান্তিকতামুক্ত মত হচ্ছে, এ রাতের ফজিলত সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত। অন্য সব সাধারণ রাতের মত মনে করা এবং এ রাতের ফজিলত কে অস্বীকার করা ভুল।

এরাতের ফজিলত সম্পর্কে মুআয ইবনে জাবাল বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (ছহীহ ইবনে হিব্বান)। এছাড়াও কিছু হাদিস এ রাতের ফজিলতের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে। তাই এরাতে দীর্ঘ সেজদার মাধ্যমে নামাজ আদায় করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা, অধিক পরিমানে কুরআন তেলাওয়াত করা, দুরুদ শরীফ পড়া ও দুআ করা সহ বিভিন্ন আমলের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও মাগফেরাত প্রত্যাশা করা যেতে পারে।

নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে নিদৃষ্ট পদ্ধতি তথা প্রথম রাকাতে অমুক সূরা, এতবার পড়তে হবে। সর্বমোট এত রাকাত পড়তে হবে এসব কিছু বর্জন করতে হবে। কেননা এসবকিছুই বানোয়াট। ভিত্তিহীন। আবার দীর্ঘ এবাদতের ক্লান্তিতে যেন ফজরের নামাজ ছুটে না যায় সেদিকেও সতর্ক থাকতে হবে।

আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করা যেতে পারে। এছাড়া ১৫ তারিখ যেহেতে আইয়ামে বীযের অন্তর্ভূক্ত, তাই দিনে রোযাও রাখা যেতে পারে। রাসুল (স.) ও ছাহাবায়ে কেরাম আইয়ামে বীয তথা প্রতি আরবি মাসের ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখতেন। অন্যদিকে হাদিসের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ইবনে মাযায় আলি রা. থেকে বর্ণিত হাদিসেও শবে বরাতে রাতে এবাদত ও দিনে রোযা রাখার কথা এসেছে। হাদিছটি মুহাদ্দিছদের নিকট দূর্বল। তবে ফজিলতের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিসের উপর আমল করা যায় বলে অনেক হাদিস বিশারদগণ মত দিয়েছেন। উল্যেখ্য শবে বরাত কে কেন্দ্র করে সমষ্টিগত সকল এবাদত থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ এজাতীয় কোন এবাদত হাদিস দ্বারা প্রমানিত নয়। এবং এরাতের আমলসমূহ ব্যক্তিগত, সম্মিলিত নয়।

নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে নিদৃষ্ট পদ্ধতি তথা প্রথম রাকাতে অমুক সূরা, এতবার পড়তে হবে। সর্বমোট এত রাকাত পড়তে হবে এসব কিছু বর্জন করতে হবে। কেননা এসবকিছুই বানোয়াট। ভিত্তিহীন। আবার দীর্ঘ এবাদতের ক্লান্তিতে যেন ফজরের নামাজ ছুটে না যায় সেদিকেও সতর্ক থাকতে হবে। এ রাতের সকল আমল মসজিদে নয় বরং যার যার ঘরে একাকী আদায় করতে হবে। তবে পূর্ব ঘোষণা ও আয়োজন ব্যতীত যদি কেউ চলে আসেন তাহলে ভিন্ন কথা। এরাতকে কেন্দ্র করে ওয়াজ-নসীহত, মিলাদ-মাহফিলের অনুষ্ঠান থেকে বিরত থাকতে হবে। হালুওয়া-রুটি বিতরণ ও মাইকে শবীনা পড়ার যে প্রচলন রয়েছে তা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। এসব কিছুই ভুল ও শরিয়ত পরিপন্থি এবং বেদাত। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সকল বিষয়ে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করার তাওফীক দান করুন। আমীন।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ